তিন লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে চাকুরী না দেয়ার অভিযোগে বরগুনার আমতলী উপজেলার দক্ষিণ রাওঘা নুর আল আমিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ সামসুল আলমের বিরুদ্ধে জিয়াউল হক বাদী হয়ে আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা হয়েছে।
আদালতের বিচারক মোঃ আরিফুর রহমান মামলাটি আমলে নিয়ে হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিন্টু মল্লিককে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
ইউপি চেয়ারম্যান সোমবার এ মামলা তদন্তের দিন ধার্য্য করেছেন। ওই প্রধার শিক্ষকের বিরুদ্ধে আরো ৬/৭ জনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চাকুরী না দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও প্রধান শিক্ষক তার অনিয়ম ধামাচাপা দিকেই পুর্নাঙ্গ কমিটি গঠন না করে বারবার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম মৃধা ও তার স্ত্রী মোসাঃ শিমুল ইসলামকে সভাপতি করে এডহক কমিটি গঠন করছেন বলে অভিযোগ অভিভাবক ও বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের। এতে ক্ষুব্দ বিদ্যালয় অভিভাবক ও এলাকাবাসী। দ্রুত প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থাসহ পুর্নাঙ্গ কমিটি গঠনের দাবী জানিয়েছেন অভিভাবক ও বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৭৪ সালে আমতলী উপজেলার দক্ষিণ রাওঘা গ্রামে শিক্ষানুরাগী মোঃ আফসার উদ্দিন মাষ্টার দক্ষিণ রাওঘা নুর আল আমিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। নব্বই দশকে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে মোঃ সামসুল আলম নিয়োগ পান। তিনি প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েই শুরু করেন অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা। গত ত্রিশ বছরে তিনি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতাকে যথাযথ সম্মানটুকু দেয়নি এমন অভিযোগ প্রতিষ্ঠাতার জেষ্ঠ পুত্র গাজী মোঃ গোলাম মোস্তফার।
২০২০ সালে প্রধান শিক্ষক নিজের মত করে তার আত্মীয় তৎকালিক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ শহীদুল ইসলাম মৃধাকে সভাপতি করে পুর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করেছেন। ওই কমিটির মেয়াদ ২০২১ সালে শেষ হয়। গত তিন বছরে তিনি পুর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করেননি। প্রধান শিক্ষক বারবার হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ শহীদুল ইসলাম মৃধা ও তার স্ত্রী মোসাঃ শিমুল ইসলামকে এডহক কমিটির সভাপতি করে আসছেন।
বিদ্যালয় অভিভাবক ও স্থানীয়দের অভিযোগ প্রধান শিক্ষক তার নিজের অনিয়ম ধামাচাপা দিতেই পুর্নাঙ্গ কমিটি গঠন না করে বারবার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীকে এডহক কমিটির সভাপতি করছেন। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পরেছে। কমিটি না থাকায় প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষকরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসছেন না বলে অভিযোগ বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের। এছাড়াও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কর্মচারী নিয়োগের নামে ৬/৭ জনের কাছ থেকে অন্তত অর্ধকোটি টাকা ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ রয়েছে।
এ ঘটনায় স্থানীয় জিয়াউল হক নামের একজন প্রধান শিক্ষক মোঃ সামসুল আলমের বিরুদ্ধে গত ১ মার্চ আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। আদালতে বিচারক মোঃ আরিফুর রহমান মামলাটি আমলে নিয়ে হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আসাদুজ্জামান মিন্টু মল্লিককে তদন্ত পুর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। ইউপি চেয়ারম্যান এ মামলা তদন্তের জন্য সোমবার দিন ধার্য্য করেছেন।
রবিবার সরেজমিনে বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী আসলেও কোন শিক্ষক নেই। দুই ঘন্টা পরে (১১ টায়) প্রধান শিক্ষক আসলেও কোন সহকারী শিক্ষক আসেননি। ছাত্র-ছাত্রী তাদের ইচ্ছামত ছুটাছুটি করছে।
শিক্ষার্থী তাহসিন, রাকিব, মুছা ও মোঃ রাহাত বলেন, প্রধান শিক্ষক নিয়মিত ক্লাসে আসেন না। তিনি না আসার কারনে সহকারী শিক্ষকরাও নিয়মিত ক্লাসে আসেন না। ফলে ঠিকমত ক্লাসে পাঠদান হচ্ছে না। তারা আরো বলেন, প্রধান শিক্ষক প্রায়ই বিদ্যালয় না এসে তাবলিগে যান।
স্থানীয় হাসান খাঁন, লেলিন মোল্লা, অপু গাজী ও হানিফ খাঁন বলেন, প্রধান শিক্ষক মোঃ সামসুল আলমের স্বেচ্ছাচারিতা ও খামখেয়ালিতে বিদ্যালয়টি ধ্বংসের মুখে। তিনি বিদ্যালয়তো আসেনই না তারপর গত তিন বছর ধরে পুর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করছেন না। নিয়োগ বানিজ্যসহ তিনি তার নানাবিধ অনিয়ম চামাচাপা দিতেই বারবার সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ শহীদুল ইসলাম মৃধা ও তার স্ত্রী শিমুলকে সভাপতি করে এডহক কমিটি গঠন করছেন। প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম ও নিয়োগ বানিজ্যের তদন্ত করে দ্রুত পুর্নাঙ্গ কমিটি গঠনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন তারা।
মামলার বাদি মোঃ জিয়াউল হক বলেন, আমার বাবা এ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। এখন আমাকেই টাকা দিয়ে চাকুরী দিতে হবে। আমাকে চাকুরী দেয়ার নামে প্রধান শিক্ষক তিন লক্ষ টাকা নিয়েছেন। চাকুরীতো দিচ্ছেই না উল্টো টাকা ফিরিয়ে না দিয়ে ঘুরাচ্ছেন। এ ঘটনায় আমি মামলা করেছি।
বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মোঃ সামসুল আলম চাকুরী দেয়ার কথা বলে টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, এডহক কমিটি গঠনের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কিছুই বলতে পারবো না। কিন্তু উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কে? এমন প্রশ্নের কোন জবাব দেননি তিনি।
বিদ্যালয় এডহক কমিটির সভাপতি মোসাঃ শিমুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কোন টাকা নেয়নি। এগুলো মিথ্যা কথা। তবে বারবার এডহক কমিটির সভাপতি আপনী এবং তার স্বামী শহীদুল ইসলাম মৃধা হওয়ার প্রসঙ্গ তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
আমতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ জিয়াউল হক মিলন বলেন, এডহক কমিটি গঠনের বিষয়টি বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের, আমার না। আমি এ বিষয়ে কিছুই বলতে পারবো না। তবে বিদ্যালয়ে শিক্ষক না আসার বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য করুন