বরগুনার আমতলী উপজেলায় ঈদ উপলক্ষে হতদরিদ্রদের মাঝে বিশেষ ভিজিএফের পচা চাল বিতরণ করা হয়েছে। উপকারভোগীরা বলছে, বিতরণের এসব দুর্গন্ধযুক্ত চাল মানুষ খেতে পারবে না তাই হাঁস মুরগিকে খাওয়াতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হতদরিদ্রদের জন্য ঈদ উপহার হিসেবে আমতলী উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ১৩ হাজার ১০০ উপকার ভোগীদের মাঝে জনপ্রতি ১০ কেজি করে ১৩১.১০০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ করেছেন। ওই চাল উপজেলা খাদ্য গুদাম থেকে সরবারহ করা হয়। এ সরবরাহকৃত চালের মধ্যে অন্তত ২০ মেট্রিক টন চাল পচা, পোকে খাওয়া ও কালো। ঈদে হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত চালের মধ্যে অন্তত ২০ মেট্রিক টন পচা চাল খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা জনপ্রতিনিধিদের সরবরাহ করেছেন। ওই চাল গত তিন দিন ধরে জনপ্রতিনিধিরা বিতরণ করছেন।
গুলিশাখালী, কুকুয়া ও আঠারোগাছিয়া ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, জনপ্রতিনিধিরা চাল যে চাল বিতরণ করছেন ওই চালের মধ্যে অনেক চাল পচা, লাল চাল, কালো ও ধুসর বর্ণ ধারন করেছে। পোকায় খেয়ে নষ্ট করে ফেলেছে। চালের মধ্যে পোকা হাঁটছে।
গুলিশাখালী গ্রামের বৃদ্ধা ভারা ভানু বলেন, আমাদেরকে পচা ও দুর্গন্ধযুক্ত চাল দেয়া হয়েছে। এ চালের ভাত খাওয়া যাবেনা। তাই হাস মুরগিরে খাওয়াতে হবে।
শাখারিয়া গ্রামের সোনে আলী খাঁন বলেন, চালে পোকায় ধরে নষ্ট করে ফেলেছে। ওই চাল হতদরিদ্রের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, পাঁচ মেট্রিক টন চালের মধ্যে অন্তত ১০-১২ বস্তা চাল পচা বের হয়েছে।
কুকুয়া ইউনিয়নের চরখালী গ্রামের হাকিম আলী বলেন, চাল অনেক পচা। আমরা গরীব মানুষ কিছু করার নেই বাধ্য হয়ে এই চালের ভাত খেতে হবে।
আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের চাল বিতরণের ট্যাগ অফিসার উপজেলা একাডেমিক সুপার ভাইজার মোঃ মাহমুদ সেলিম বলেন, খাদ্যগুদাম থেকেই পচা চাল সরবরাহ করেছে। আমারতো কিছুই করার নেই। ওই চাল বিতরণ করা হয়েছে।
আঠারোগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ রফিকুল ইসলাম রিপন হাওলাদার বলেন, খাদ্য গুদাম থেকে পচা চাল সরবরাহ করেছে। ওই চাল বাধ্য হয়ে বিতরণ করেছি। তিনি আরো বলেন, পচা চাল বিতরণের কথা খাদ্য গুদাম কর্তকর্তাকে জানিয়েছি। যা বিতরণ করা হয়েছে। আর করবো না। পচা চাল খাদ্য গুদামকে ফিরিয়ে দেব।
গুলিশাখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড. এইচএম মনিরুল ইসলাম মনি বলেন, সরকারী খাদ্য গুদাম থেকে চাল দিয়েছে, সে চাল পচা হলেও আমি বলতে পারি না।
কুকুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ বোরহান উদ্দিন মাসুম তালুকদার বলেন, খাদ্য গুদাম থেকে সরবরাহকৃত হতদরিদ্রদের চাল অপেক্ষাকৃত খারাপ।
আমতলী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, গুদামে কোন পচা চাল নেই। গুদাম থেকে পচা চাল সরবরাহ করা হয়নি। হতদরিদ্ররা পচা চাল পেলো কোথায় এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেনি তিনি।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য করুন