করোনার প্রভাব মোকাবেলায় প্রায় চার হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)।
ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল করতে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে পাওয়া অর্থে গঠন করা হয় এ তহবিল। এ অর্থ থেকে গ্রামের কৃষি ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ইতোমধ্যে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর (এমএফআই) মাধ্যমে ঋণ দেয়া শুরু হয়েছে। উদ্যোক্তাদের সুবিধার্থে ঋণের সুদের হার ২৪ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশ কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ শতাংশ। ঋণের মেয়াদ এক বছর থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে দুই বছর। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
সূত্র জানায়, ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) থেকে নিবন্ধন নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে প্রায় ৮০০ প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে পিকেএসএফ থেকে অর্থায়ন সুবিধা পায় ২০২টি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান প্রায় ৩০ লাখ ক্ষুদ্র উদ্যোগে ঋণ দেয়। ইতোমধ্যে সাড়ে ১৪ লাখ প্রতিষ্ঠানকে কাজ শুরু করার জন্য ঋণের প্রথম কিস্তি দেয়া হয়েছে। আরও সাড়ে ১৬ লাখ প্রতিষ্ঠান ঋণ পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। তহবিল সংকটের কারণে সব প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়া যাচ্ছে না।
ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো আগে ২৪ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করত। করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে সুদের হার ৬ শতাংশ কমিয়ে ১৮ শতাংশ নির্ধারণ করেছে পিকেএসএফ। এখন থেকে ক্ষুদ্র উদ্যোগে এই হারেই ঋণ দেয়া হবে। তবে ব্যক্তি ক্ষুদ্রঋণের সুদের হার ২৪ শতাংশ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পিকেএসএফের একজন কর্মকর্তা জানান, ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে দক্ষতা অর্জন করেছে। তহবিল ব্যবস্থাপনাও ভালো। তারা কম সুদে তহবিল পাচ্ছে। এখন পরিচালন ব্যয় কমাতে হবে। ফলে সুদের হার আরও কমানো সম্ভব হবে।
করোনার প্রণোদনা হিসেবে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে সরকার থেকে বরাদ্দ ৫০০ কোটি টাকার মধ্যে তারা পেয়েছে ২৫০ কোটি টাকা। এ অর্থ ইতোমধ্যে ১৮ শতাংশ সুদে মাঠ পর্যায়ে বিতরণ করা হয়েছে। বাকি ২৫০ কোটি টাকা আগামী সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে চাওয়া হবে।
এর বাইরে ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর অ্যাগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্টের (ইফাদ) কাছ থেকে ৮ কোটি ডলার বা ৬৮৮ কোটি টাকা পেয়েছে পিকেএসএফ। এ অর্থ থেকে গ্রামীণ কৃষি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ দেয়া হচ্ছে। এর সুদের হার এখনও ২৪ শতাংশ। তবে পর্যায়ক্রমে এর সুদের হার ১৮ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিকেএসএফ।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক থেকে পিকেএসএফ অচিরেই পাচ্ছে ৫ কোটি ডলার বা ৪৩০ কোটি টাকা। এ তহবিল থেকে ১৮ শতাংশ সুদে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ দেয়া হবে। তহবিলটি সঠিকভাবে পরিচালিত হলে আগামী বছরে এডিবি আরও ১০ কোটি ডলার বা ৮৬০ কোটি টাকা দেয়ার অঙ্গীকার করেছে। বিশ্বব্যাংক ১৫ কোটি ডলার বা ১ হাজার ২৯০ কোটি ডলার দেবে অচিরেই। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে চুক্তি হয়েছে। এসব ঋণও ১৮ শতাংশ সুদে বিতরণ করা হবে।
ইতোমধ্যে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার সংস্থান হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বরাদ্দ করেছে ৩ হাজার কোটি টাকা, সরকার বরাদ্দ করেছে ২ হাজার কোটি টাকা, পিকেএসএফ বিভিন্ন উৎস থেকে সংস্থান করছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা, পিকেএসএফ ও ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দিচ্ছে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের ৩ হাজার কোটি টাকার তহবিল থেকে মাঠপর্যায়ে ঋণ বিতরণ করতে হবে ৯ শতাংশ সুদে।
মন্তব্য করুন